বন্যা বাংলাদেশের জন্য প্রতিবছরের দূর্যোগ। বর্ষাকাল আসতেই দেশের অন্তত শতকরা ১৮ ভাগ অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়। তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে শতকরা ৭৫ ভাগ অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। ২০২০ সাল ব্যাতিক্রম নয়। কিন্তু শ্রাবণের অর্ধেক মাস চলে যাবার পরও বন্যার পানি বিপদ সীমার অনেক উপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবার জন্য সতর্কতা জারি করা হচ্ছে। এক মাসে দেশের শতকরা ৩১ ভাগ এলাকা প্লাবিত এবং ১৬ টি জেলার অবস্থা মারাত্মক। এমনকি দ্বিতীয় দফা বন্যা হবার আশঙ্কা করছে গবেষকবৃন্দ। ২০২০ সালের এই বন্যা দেশের জন্য অন্য বারের তুলনায় বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা করোনা মহামারির প্রভাবে দেশের অর্থনীতি ইতিমধ্যে হুমকির সম্মুখীন।
এপ্রিল ও মে দুই মাস সারা দেশ লকডাউন থাকার কারণে, কৃষি, শিল্প ও সার্ভিস, তিনটি প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই ব্যপক ক্ষতি সাধন হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ থাকার কারণে গ্রামীন কৃষকেরা তাদের ফসল সঠিক মূল্যে বিক্রয় করতে পারেনি। অনেক মাছ চাষী সঠিক সময়ে পুকুরে পোনা ছাড়তে পারেনি। লাভের টাকা না থাকায় পরবর্তী ফলনের জন্য বীজ ক্রয় করা অনেকের জন্য অসম্ভব হয়ে যায়। সরকারের উদ্যোগে বা বিভিন্ন ভাবে টাকা লোন করে ক্ষতি সামলানোর চেষ্টা করলেও বন্যার জন্য পুনরায় ক্ষতির সম্মুখীন।সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুড়িগ্রাম, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ সহ অন্যান্য জেলায় মাছ চাষীদের পুকুরের পোনা ও মাছ ভেসে গেছে।
জুন থেকে শুরু হয়ে জুলাই পর্যন্ত ৩৩ লক্ষ্য মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। যাদের অধিকাংশকে আশ্রয়স্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে করোনা জন্য সামাজিক দূরুত্ব ও নিয়মিত সতর্কতা অবলম্বন করা অসম্ভব। আবার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীন জনপদের আবাসস্থল মেরামতের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা অনেকের মজুদ নেই। অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি অবকাঠামো গত ক্ষতি পূরনের জন্যও দেশ কে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। কেননা সাধারণ অবস্থায় কোন দূর্যোগ হতে পূর্ব অবস্থা ফেরত পেতে বা ক্ষতির ধাক্কা সামলিয়ে পুনরায় দাড়াতে ৩-৫ বছর সময় লাগে। কিন্তু গত কয়েক বছরের টানা তীব্র বন্যা, ঘূর্নিঝড় আম্পান ও করোনা মহামারী এই সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়।